রাখিবন্ধন সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য | রাখি বন্ধন উৎসব কেন পালন করা হয়

সুপ্রিয় বন্ধুরা,
আজকের পোস্টে রাখি বন্ধন বা রাখি পূর্ণিমা উৎসব সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করলাম। যার মাধ্যমে আপনারা রাখি বন্ধন উৎসবের সূচনা, ইতিহাস, পৌরাণিক কাহিনী প্রভৃতি সমস্ত কিছু সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা লাভ করতে পারবেন।
“বাংলার মাটি বাংলার জল বাংলার বায়ু বাংলার ফল –
পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, পুণ্য হউক হে ভগবান।
বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ –
পূর্ণ হউক, পূর্ণ হউক, পূর্ণ হউক হে ভগবান।
বাঙালির পণ, বাঙালির আশা, বাঙালির কাজ, বাঙালির ভাষা –
সত্য হউক, সত্য হউক, সত্য হউক হে ভগবান।
বাঙালির প্রাণ, বাঙালির মন, বাঙালির ঘরে যত ভাই বোন –
এক হউক, এক হউক, এক হউক হে ভগবান।”
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রাখিবন্ধন উৎসব
রাখিবন্ধন উৎসব হল একটি মহাপবিত্র ও সুন্দর সংহতির অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানের দ্বারা ভাই-বোনের মধ্যে ভালোবাসা ও স্নেহের বন্ধনকে দৃঢ় শক্তিশালী ও পুনরুজ্জীবিত করে তোলে। এই চিরন্তন পবিত্র উৎসব পরিবারের সকল সদস্যদের পাশাপাশি সমাজ তথা সমগ্র মানবজাতিকে সুসম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ করে ও ঐক্যকে নিশ্চিত করে। রাখিবন্ধন অনুষ্ঠানে ভাইদের পাশাপাশি বোনরা নতুন পোশাক পরিধান করে এবং মিষ্টি মুখ করানোর মধ্য দিয়ে ভাইদের হাতে পবিত্র সুতো বা রাখি বেঁধে দেয়। পরিবর্তে ভাইরা বোনদেরকে উপহার দিয়ে থাকে। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে রাখিবন্ধনের দিনটাকে বিশেষভাবে পালন করার লক্ষ্য মাত্রা নিয়েছে।
রাখিবন্ধন উৎসব কেন পালন করা হয় ?
‘রাখিবন্ধন’ বা ‘রাখিপূর্ণিমা’ ভারতের একটি সুপ্রচলিত পবিত্র উৎসব। প্রধানত এই দিনে ভাই-বোনের সম্পর্ক আজীবন রক্ষা করার উদ্দেশ্যে দাদা বা ভাইয়ের ডান হাতের কব্জিতে দিদি বা বোনেরা পবিত্র সুতো বেঁধে দেয়। এর মাধ্যমে দিদি বা বোনেরা, দাদা বা ভাইয়ের মঙ্গল কামনা করে থাকে। বিনি হিন্দু পঞ্জিকা মতে শ্রাবন মাসের শুক্লা পক্ষের পূর্ণিমা তিথিতে এই উৎসব পালন করা হয়ে থাকে। রাখিবন্ধন উৎসবটি ভারতবর্ষের সকল জাতি ও বর্ণের মানুষের মধ্যে প্রচলিত; তবে হিন্দু, মুসলমান, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ ধর্মের মানুষদের মধ্যেই বেশী প্রচলিত থাকে। তবে বর্তমানে এদেশের পাশাপাশি বিদেশেও এই উৎসব খ্যাতি অর্জন করেছে।
পৌরাণিক কাহিনী
রাখিবন্ধন উৎসবের উৎপত্তি খুঁজতে গিয়ে মহাভারতের কাহিনী সম্পর্কে জানতে পারি। মহাভারতে বর্ণিত, এক যুদ্ধে কৃষ্ণের কবজিতে আঘাত লেগে রক্তপাত শুরু হলে পঞ্চপাণ্ডবের স্ত্রী দ্রৌপদী তাঁর শাড়ির আঁচল খানিকটা ছিঁড়ে কৃষ্ণের হাতে বেঁধে দেন। ফলতু দ্রৌপদী তাঁর অনাত্মীয়া হলেও, তিনি দ্রৌপদীকে নিজের বোনের মর্যাদা দেন। পরবর্তীতে কৌরব পক্ষ কতৃক দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ কালে শ্রীকৃষ্ণ দৌপদী সম্মান রক্ষা করে ভাই-বোনের সম্পর্ককে দৃষ্টান্ত স্বরূপ গড়ে তোলে, এইভাবেই রাখীবন্ধনের প্রচলন হয়।
ঐতিহাসিক কাহিনী বা রাখিবন্ধন ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ঊনবিংশ শতকের প্রথমার্ধে ভারতবর্ষে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন চরম পর্যায়ে পৌঁছালে ব্রিটিশ সরকার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাকে দুটি প্রদেশে বিভক্ত করবে। ফলতু তৎকালীন সময় দেশে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা চরম আকার ধারন করে। ব্রিটিশ সরকারের এই বিরূপ সিদ্ধান্ত বঙ্গভঙ্গ প্রতিরোধ করার জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তৎকালীন হিন্দু ও মুসলিম ভাই ও বোনকে একতা হওয়ার আহ্বান করেছিলেন।
১৯০৫ সালের জুন মাসে লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে ওই বছরেরই আগস্ট মাসে বঙ্গভঙ্গ জন্য আইন পাশ করায় এবং আইনটি ১৯০৫ সালের ১৬ ই অক্টোবর কার্যকর হলে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বোধ জাগিয়ে তোলা এবং ব্রিটিশদের বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সবাইকে রাখী বন্ধন উৎসব পালন করার জন্য আহ্বান করেন।
■ আরও পড়ুনঃ ভারতের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে বক্তব্য