শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জীবনী PDF | Sarat Chandra Chattopadhyay Biography in Bengali PDF
আজকের পোস্টে বাংলা ভাষার অন্যতম জনপ্রিয় কথা-সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনী সম্পর্কে আলোচনা করলাম। যেটিতে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ব্যক্তি জীবন, শিক্ষা জীবন, কর্ম জীবন, সাহিত্যচর্চা, পুরস্কার ও সম্মাননা ইত্যাদি সুন্দরভাবে দেওয়া আছে।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জীবনী
নাম | শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় |
ছদ্মনাম | অনিলা দেবী |
জন্ম | ১৫ই সেপ্টেম্বর ১৮৭৬ |
জন্মস্থান | দেবানন্দপুর, ব্যান্ডেল, হুগলী জেলা |
পেশা | লেখক |
মৃত্যু | ১৬ই জানুয়ারি ১৯৩৮ |
ব্যক্তি জীবন
বাংলা তথা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ভারতের প্রেসিডেন্সি বিভাগের হুগলী জেলার দেবানন্দপুরে অত্যন্ত দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মতিলাল চট্টোপাধ্যায় এবং মাতা ভুবনমোহিনী দেবীর পাঁচ সন্তানের মধ্যে শরৎচন্দ্র ছিলেন দ্বিতীয়। শৈশব কালে শরৎচন্দ্র বাবু ন্যাঁড়া ডাক নামেই এলাকায় পরিচিত ছিল। কালক্রমে পিতা মতিলাল চট্টোপাধ্যায় মহাশয় তার পত্নী ভুবনমোহিনী দেবীর পৃত্রালয় কেদারনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে স্ত্রী ও পাঁচ সন্তান (অনিলা দেবী, শরৎচন্দ্র, প্রভাষচন্দ্র, প্রকাশচন্দ্র, সুশীলা দেবী) কে নিয়ে ভাগলপুরে বসবাস শুরু করেন।
শিক্ষা জীবন
পিতা মতিলাল চট্টোপাধ্যায় মহাশয় ব্রাহ্মণ পন্ডিত হওয়ার সুবাদে তিনি শরৎচন্দ্র বাবুকে পাঁচ বছর বয়সে দেবানন্দপুরের প্যারি পন্ডিতের পাঠশালায় ভর্তি করিয়ে দেন, সেখানে দু-তিন বৎসর শিক্ষা অর্জনের পর ভাগলপুরে চলে আসলে মামা স্থানীয় দুর্গাচরণ বালক বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেন। ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে শরৎচন্দ্র ভাগলপুর জেলা স্কুলে ভর্তি হন। ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে মতিলাল মহাশয়ের চাকরী চলে যাওয়ায় মতিলালবাবু স্বপরিবারে দেবানন্দপুরে ফিরে আসলে শরৎচন্দ্র স্কুল ত্যাগ করতে বাধ্য হন। এসময় তিনি হুগলী ব্রাঞ্চ স্কুলে ভর্তি হন কিন্তু ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে দারিদ্রতার কারণে স্কুল ফ্রি জমা করতে না পারার কারণে পুনরায় স্কুল ত্যাগ করতে বাধ্য হন। এসময়ে তিনি ‘কাশীনাথ’ ও ‘ব্রহ্মদৈত্য’ নামে দুটি গল্প লেখেন। ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে মতিলাল মহাশয় পুনরায় ভাগলপুর ফিরে গেলে প্রতিবেশী সাহিত্যিক তথা তেজনারায়ণ জুবিলি কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় শরৎচন্দ্রের শিক্ষার আগ্রহ লক্ষ করে তাকে তার বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন। এই বিদ্যালয় থেকে ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় বিভাগে এনট্রান্স পরীক্ষা পাস করে তেজনারায়ণ জুবিলি কলেজে ভর্তি হন। এই সময় তিনি তার মাতা ভুবনমোহিনী দেবীর ছোটো ভাই অঘোরনাথের দুই পুত্র সুরেন্দ্রনাথ ও গিরীন্দ্রনাথকে পড়ানোর বিনিময়ে অঘোরনাথ মহাশয় শরৎচন্দ্রের শিক্ষার প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাতেন। এভাবেই তিনি কঠোর পরিশ্রমের মাধমে শিক্ষাগ্রহণ করেন।
কর্ম জীবন
কলেজ ত্যাগ করার পর শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ভাগলপুর শহরের আদমপুর ক্লাবের সদস্যের সঙ্গে খেলাধুলা ও অভিনয় করে সময় কাটাতে শুরু করেন। এসময়ে তিনি বনেলী রাজ এস্টেটে কয়েকদিন চাকুরী করেন। এসময় পিতার মৃত্যু হলে ভাগলপুর ফিরে এসে পিতার শ্রাদ্ধ সম্পন্ন করে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হন সেখানে তিনি কলকাতার উচ্চ আদালতের উকিল লালমোহন গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে ত্রিশ টাকা বেতনে হিন্দি বইয়ের ইংরাজি তর্জমা করার কাজ করেন। ছয় মাস লালমোহনের বাড়িতে কাটানোর পর শরৎচন্দ্র ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে রেঙ্গুনে (প্রাপ্তন বর্মার রাজধানী) লালমোহন গঙ্গোপাধ্যায়ের ভগ্নিপতি উকিল অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে চলে যান। সেখানে থাকাকালীন সময় অঘোরনাথ মহাশয় তাহাকে বর্মা রেলওয়ের অডিট অফিসে একটি অস্থায়ী চাকরির ব্যবস্থা করে দেন। দুই বছর পর তার চাকরি চলে গেলে তিনি তার বন্ধু গিরীন্দ্রনাথ সরকারের সঙ্গে পেগু চলে যান ও সেখানে অবিনাশ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে বসবাস করেন। ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে মণীন্দ্রনাথ মিত্রের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বর্মার পাবলিক ওয়ার্কস অ্যাকাউন্টস অফিসে শরৎচন্দ্র মহাশয় চাকরি পাওয়ার পর একাগ্রতার সঙ্গে কাজ করতে থাকেন। ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে শরৎচন্দ্র এক মাসের ছুটি নিয়ে দেশে ফিরে এলে যমুনা পত্রিকায় লেখা-লিখি শুরু করেন এবং পুনরায় রেঙ্গুনে গমন করলে সেখান থেকে ‘রামের সুমতি’ গল্প ও ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকা জন্য লেখা পাঠাতে থাকেন। অতপরে ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরে শরৎচন্দ্র মহাশয় চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে রেঙ্গুন ত্যাগ করে বাংলায় ফিরে আসেন।
সাহিত্যচর্চা
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একজন লেখক, গল্পকার বা ঔপন্যাসিকই নন তিনি হলেন বাংলা ভাষার সবচেয়ে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক। তার সাহিত্যকর্ম গুলো নিম্নে দেওয়া হলো –
- উপন্যাসঃ বড়দিদি, বিরাজবৌ, বিন্দুর ছেলে, পরিণীতা, পণ্ডিতমশাই, মেজদিদি, পল্লীসমাজ, শ্রীকান্তের-প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ পর্ব; দেবদাস, চরিত্রহীন, দত্তা, স্বামী, ছবি, গৃহদাহ, বামুনের মেয়ে, দেন-পাওনা, পথের দাবী, শেষ প্রশ্ন, শেষের পরিচয় ইত্যাদি।
- নাটকঃ ষোড়শী, রমা, বিরাজ বউ, বিজয়া।
- গল্পঃ রামের সুমতি,পরিণীতা,বিন্দুর ছেলে, পথ নির্দেশ, আঁধার আলো, দর্পচূর্ণ, কাশীনাথ, ছবি, বিলাসী, মহেশ, অভাগীর স্বর্গ, অনুরাধা, সতী, পরেশ ইত্যাদি।
- প্রবন্ধঃ নারীর মূল্য, স্বদেশ ও সাহিত্য, স্মৃতিকথা, অভিনন্দন ইত্যাদি।
পুরস্কার ও সম্মাননা
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অপ্রতিদ্বন্দ্বী জনপ্রিয়তার দরুন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘অপরাজেয় কথাশিল্পী’ নামে খ্যাত। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জগত্তারিণী স্বর্ণপদক পুরস্কার পান। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সদস্য হন। এছাড়াও তিনি ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ডিলিট’ উপাধি পান।
জীবনাবসান
রেঙ্গুন থেকে বাংলায় ফিরে আসার পর তার শারীরিক অবস্থা খুব একটা আশানুরূপ ছিল না। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের শেষের দিকে শরৎচন্দ্র মহাশয়ের শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক পরিস্থিতি পৌঁছালে চিকিৎসকের পরামর্শে তিন-চার মাস দেওঘরে কাটিয়ে কলকাতায় ফিরে আসলে আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে। এই সময় তার যকৃতে ক্যান্সার ধরা পড়ে, পরে তা পাকস্থলী পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়লে। বিধানচন্দ্র রায় ও কুমুদশঙ্কর প্রমুখ অস্ত্রোপ্রচারের পক্ষে মত দিলে, ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে ১২ই জানুয়ারী শল্য চিকিৎসক ললিতমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় তার দেহে অস্ত্রপ্রচার করলে শারীরিক অবস্থা দিন দিন আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ে চার দিন অর্থাৎ ১৬ই জানুয়ারি সকাল দশটা নাগাদ পরলোক গমন করে।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জীবনী PDF
File Details :
File Name : Sarat Chandra Chattopadhyay Biography
Language : Bengali
No. of Pages : 02
Size : 0.6 MB