Thursday, October 10, 2024
Homeজীবনীক্ষুদিরাম বসুর জীবনী | Khudiram Bose Biography in Bengali

ক্ষুদিরাম বসুর জীবনী | Khudiram Bose Biography in Bengali

ক্ষুদিরাম বসু জীবনী

ক্ষুদিরাম বসু | শৈশব জীবন, কৈশোর জীবন, শিক্ষাজীবন, কর্মজীবন, বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ড, সংগ্রামী জীবন

ক্ষুদিরাম বসুর জীবনী
ক্ষুদিরাম বসুর জীবনী

যারা কিশোর বিপ্লবী নেতা ক্ষুদিরাম বসু সম্পর্কে জানার জন্য বা ক্ষুদিরাম বসু নিয়ে রচনা লেখার জন্য অথবা ক্ষুদিরাম বসু সম্পর্কে বক্তব্য দেওয়ার জন্য ভালো ধরনের আর্টিকেল অনুসন্ধান করছেন, তাদের জন্য আমাদের আজকের এই পোস্ট।

এই পোস্টটিতে ক্ষুদিরাম বসুর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় সম্পর্কে খুব সুন্দরভাবে বর্ণনা করা আছে, আমরা আশা রাখবো পোস্টটির মাধ্যমে আপনারা ক্ষুদিরাম বসু সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে যাবেন।

ক্ষুদিরাম বসু

“একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি,
হাসি হাসি পরব ফাঁসি
দেখবে ভারতবাসি।

আমি হাসি হাসি পরব ফাঁসি
দেখবে ভারতবাসী
একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি।”

-পীতাম্বর দাস

ঊনবিংশ শতকের গোড়ার দিকে দেশকে পরাধীনতা থেকে মুক্ত করার জন্যে এগিয়ে এলেন বাংলার তরুণ প্রজন্ম। তাঁদের মধ্যে অগ্নি কিশোর বৈপ্লবিক ক্ষুদিরাম বসু ছিলেন প্রথম শহীদ, যার সৎ সাহস ও ঐকান্তিক প্রবৃত্তি সবাইকে বিস্মিত করতাে।

নামক্ষুদিরাম বসু
জন্ম৩রা ডিসেম্বর ১৮৮৯
জন্মস্থানমোহবনী (হবিবপুর), পশ্চিম মেদিনীপুর
মৃত্যু১১ই আগস্ট ১৯০৮
জাতীয়তাভারতীয়
জাতিসত্তাবাঙালি
শৈশব জীবন

তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত মেদিনীপুর জেলা শহরের কাছাকাছি কেশপুর থানার অন্তর্গত মোহবনী গ্রামে ৩রা ডিসেম্বর ১৮৮৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ক্ষুদিরাম বসু হলেন পিতা ত্রৈলোক্যনাথ বসু ও মাতা লক্ষীপ্রিয় দেবীর চতুর্থ সন্তান। পরবর্তী সময়ে পুত্রের মৃত্যুর আশঙ্কায় তাঁহারা তখনকার সমাজের নিয়ম অনুযায়ী তাদের পুত্রকে তার বড় বোনের কাছে তিন মুঠি খুদের বিনিময়ে বিক্রি করে দেন। খুদের বিনিময়ে ক্রয়কৃত শিশুটির নাম পরবর্তীকালে ক্ষুদিরাম রাখা হয়। ক্ষুদিরাম বসু তার বড়ো দিদি অপরুপা দেবীর ছত্রছায়ায় ও স্নেহ-ভালোবাসার বড়ো হতে থাকে। অপরুপা দেবীর স্বামী অমৃতলালবাবুর চাকরী ক্ষেত্রে স্থান বদলী হলে ক্ষুদিরাম বসুকেও একজায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরে বেড়াতে হত।

কৈশোর জীবন

ক্ষুদিরাম বসু প্রাপ্তবয়সে পৌঁছানোর অনেক আগেই একজন ডানপিটে, বাউন্ডুলে, রোমাঞ্চপ্রিয় হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। কিন্তু ১৯০২-০৩ খ্রিস্টাব্দ কালে যখন বিপ্লবী নেতা শ্রী অরবিন্দ এবং সিস্টার-নিবেদিতা মেদিনীপুর ভ্রমণ করে জনসম্মুখে বক্তব্য রাখলে, সেখানে উপস্থিত তরুণ ছাত্র ক্ষুদিরাম বসু বিপ্লবে অনুপ্রাণিত হন এবং স্পষ্টভাবেই তিনি অনুশীলন সমিতিতে যোগদান করেন। ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে ক্ষুদিরাম তার বোন অপরূপার স্বামী অমৃতলালবাবুর সাথে তমলুক শহর থেকে মেদিনীপুরে চলে আসেন।

শিক্ষাজীবন

ক্ষুদিরাম বসু তমলুকের হ্যামিল্টন স্কুল এবং মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষালাভ করেন।

কর্মজীবন

ক্ষুদিরাম বসু ছিলেন একজন প্রাণদরদী ও ভালোবাসার মানুষ। স্বাভাবিক ভাবেই মানুষের দুঃখ-কষ্ট দেখলে তার প্রাণও কেঁদে উঠতো। জনগণ এর সেবাই ছিল তাঁর কাছে পরম ব্রত। প্রকৃতির নানান দুর্যোগে মানুষের সাহায্যের জন্য বাড়ি বাড়ি ঘুরে অর্থ সংগ্রহ করে দুটি অন্নের ব্যবস্থা করতেন। দেশসেবা ও মাতৃ জননী ভারতমায়ের স্বাধীনতার দাবিতে বিপ্লবী সংগঠনে যুক্ত হয়ে জীবন উৎসর্গ করেন।

বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডের জীবন

মেদিনীপুরে আসার পরই তাঁর বিপ্লবী জীবনের অভিষেক। তিনি বিপ্লবীদের একটি নবগঠিত আখড়ায় যোগ দেন। ১৯০২ সালে জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসু এবং রাজনারায়ণ বসুর প্রভাবে মেদিনীপুরে একটি গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠন গড়ে উঠেছিল। এটি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ব্রিটিশবিরোধীদের দ্বারা পরিচালিত হতো। ওই সংগঠনের নেতা ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু। অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই ক্ষুদিরাম তার গুণাবলীর জন্য সবার চোখে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেন। ক্ষুদিরাম সত্যেন্দ্রনাথের সাহায্যে বিপ্লবী দলভুক্ত হয়ে এখানে আশ্রয় পান। ক্ষুদিরাম তাঁরই নির্দেশে “সোনার বাংলা” শীর্ষক বিপ্লবাত্মক ইশতেহার বিলি করে গ্রেপ্তার হন। ১৯০৬ সালে কাঁসাই নদীর বন্যার সময়ে রণপার সাহায্যে ত্রাণকাজ চালান।

সংগ্রামী জীবন

ক্ষুদিরাম বসু তার শিক্ষক সত্যেন্দ্রনাথ বোস এর নিকট হতে এবং শ্রীমদ্ভগবদগীতা পড়ে ব্রিটিশ উপনিবেশের বিরুদ্ধে বিপ্লব করতে অনুপ্রাণিত হন। তিনি বিপ্লবী রাজনৈতিক দল যুগান্তরে যোগ দেন। ১৬ বছর বয়সে ক্ষুদিরাম পুলিশ স্টেশনের কাছে বোমা পুঁতে রাখেন এবং ইংরেজ কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করেন। একের পর এক বোমা হামলার দায়ে ৩ বছর পর তাকে আটক করা হয়। ৩০শে এপ্রিল ১৯০৮ এ মুজাফফরপুর, বিহারে রাতে সাড়ে আটটায় ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল যৌথ ভাবে ইউরোপিয়ান ক্লাবের সামনে কিংসফোর্ড হত্যা পরিকল্পনায় বোমা ছুড়লে গাড়িতে উপস্থিত জনৈক বৃটিশ মিসেস কেনেডি এবং তার কন্যা মিস কেনেডিকে হত্যা করেন।

ক্ষুদিরামের ফাঁসি

ইউরোপিয়ান ক্লাবের সামনে তিনজনকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত ক্ষুদিরামের বিচার শুরু হয় ২১শে মে ১৯০৮ তারিখে যা আলিপুর বোমা মামলা নামে পরিচিত হয়। বিচারক ছিলেন জনৈক বৃটিশ মি. কর্নডফ এবং দুইজন ভারতীয়, লাথুনিপ্রসাদ ও জানকিপ্রসাদ। রায় শোনার পরে ক্ষুদিরামের মুখে হাসি দেখা যায়। তার বয়স খুব কম ছিল। বিচারক কর্নডফ তাকে প্রশ্ন করেন, তাকে যে ফাঁসিতে মরতে হবে সেটা সে বুঝেছে কিনা ? ক্ষুদিরাম আবার মুচকে হাসলে বিচারক আবার প্রশ্নটি করেন। ক্ষুদিরাম তখন ওপরে উদ্ধৃত কথাটি বলেন। তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় ভোর ছয় টায়। দিনটা ছিল ১৯০৮ সালের ১১ ই আগস্ট। সেই দিন খুব ভােরে ক্ষুদিরাম উঠে পড়লেন, ভাবছিলেন তাকে পৃথিবী থেকে চিরদিনের জন্যে বিদায় নিতে হবে। অথচ সবাইকে ছেড়ে যেতে তার মন সরছিল না। কিন্তু নির্ভীক হৃদয়ে তিনি ফাঁসির জন্যে তৈরি হলেন। মনের মধ্যে তিনি যেন একটা শক্তির সন্ধান পেয়েছিলেন। তাই ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়েও তিনি ছিলেন নির্ভীক। হাসি মুখে ফাঁসির দড়ি গলায় দিয়ে তিনি মৃত্যুকে বরণ করলেন।

RELATED ARTICLES

1 COMMENT

  1. নজরুল ইসলামের লেখা বই ও তার প্রকাশিত সালের তালিকা দিলে খুব উপকৃত হতাম । অগ্রীম ধন্যবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Recent posts

popular posts