মেজর ধ্যানচাঁদ জীবনী PDF | Major Dhyan Chand Biography in Bengali PDF
আজকের পোস্টে হকির জাদুকর এবং যার জন্ম তারিখটি ভারতে জাতীয় ক্রীড়া দিবস হিসাবে পালিত হয় তাঁর অর্থাৎ মেজর ধ্যানচাঁদের জীবনী সম্পর্কে আলোচনা করলাম। যেটিতে ধ্যানচাঁদের ব্যক্তি জীবন, কর্ম জীবন, খেলোয়াড় জীবন, পুরস্কার ইত্যাদি সুন্দরভাবে দেওয়া আছে।
মেজর ধ্যানচাঁদ এর জীবনী
ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে “All works and no play makes jack a dull boy”, খেলাধুলার আনন্দ মানুষকে দৈনন্দিন জীবনের গ্লানি থেকে বৃহত্তর কাজের জগতে মুক্তি দেয়, তাই খেলাধুলার এত কদর। তেমনি ১৯২৮ সালে অলিম্পিকে হকির জাদুকর ধ্যানচাঁদের হাত ধরে ব্রিটিশ ভারতের অধিবাসীরা পেয়েছিল বিশ্বজয়ের এক অনন্য সম্মান। হকির সেই গৌরবজনক অধ্যায়ে প্রভাতী কিরণ তথা হকির জাদুকর হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছিল মেজর ধ্যানচাঁদ।
জন্ম নাম | ধ্যান সিং |
ডাকনাম | হকির জাদুকর |
জন্ম | ২৯শে আগস্ট ১৯০৫ |
জন্মস্থান | এলাহাবাদ, আগ্রা ও অবধের যুক্তপ্রদেশ, ব্রিটিশ ভারত |
মৃত্যু | ৩রা ডিসেম্বর ১৯৭৯ |
ব্যক্তি জীবন
২৯শে আগস্ট ১৯০৫ সালে ব্রিটিশ ভারতের উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদের (প্রয়াগরাজ) এক রাজপুত ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন কিংবদন্তী হকির জাদুকর ধ্যান সিং ওরফে ধ্যানচাঁদ। তিনি ছিলেন পিতা সামেশ্বর দত্ত সিং ও মাতা শরধা সিং এর মধ্যম পুত্র।
কর্ম জীবন ও খেলোয়াড় জীবন
মাত্র ১৬ বছর বয়সে বাবা ও বড় ভাইয়ের হাত ধরে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে সেনাবাহিনীর ব্রাহ্মহ রেজিমেন্টের সাধারণ সেপাই হিসাবে যোগদান করেন। ওই রেজিমেন্টরেই সুবেদার মেজর বালে তেওয়ারীর হাতেই ধ্যান চাঁদের হকি খেলায় হাতেখড়ি হয়। সেখান থেকেই সেন্টার ফরওয়ার্ড হিসাবে সেনা দলের মধ্যে খ্যাতি অর্জন করেছিল। তিনি সেনাবাহিনীর মধ্যেই ১৯২২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দ পযর্ন্ত যুক্ত ছিলেন।
সেসময়ে এক ফৌজী দলকে নিউজিল্যান্ডে পাঠানোর বন্দোবস্ত হলে, ক্রীড়াক্ষেত্রে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ধ্যানচাঁদ নির্বাচিত হন। এই নিউজিল্যান্ড সফর থেকেই ভারতের যাত্রা শুরু হয়। নিউজিল্যান্ডে ভারতীয় হকির বিস্ময়কর সাফল্য বিশ্ব ক্রীড়া দরবারে সাড়া ফেলেছিল। ভারত তথা বিশ্বেও ধ্যানচাঁদের বিস্মিয়কর প্রতিভা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। যার ফলে সামরিক জীবনের সেপাই পদ থেকে ল্যান্স নায়ক পদে ঘটেছিল পদোন্নতি।
ভারতের এই অভাবনীয় সাফল্যের জেরে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় হকি দল প্রথম আয়ামস্টারডাম বিশ্ব অলিম্পিকে যোগদান করে এবং প্রথম স্বর্ণপদক জয় লাভ করে। ঐ অলিম্পিকে ভারতীয় জার্সিতে সেন্টার ফরওয়ার্ড ধ্যানচাঁদ মাত্র ৫ ম্যাচে ১৪টি গোল করে হয়ে ওঠেন সর্বোচ্চ স্কোরার। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে লস অ্যাঞ্জেলসের অলিম্পিকে আবারও সোনা জয় করে ভারতীয় হকি দল। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে লস অ্যাঞ্জেলসের আমেরিকাকে ২৪-১ গোলে হারিয়ে রেকর্ড গড়ে ভারত। সে বার ভারতের মোট ৩৫টি গোলের মধ্যে ধ্যানচাঁদ ও তাঁর ভাই রূপ সিং দু’জনে মিলে করেন ২৫টি গোল।
ভারতীয় হকি দলের সাফল্যের জেরে ধ্যানচাঁদ ভারতীয় সেনার ল্যান্স নায়কের পদ থেকে নায়ক। ১৯৩৬ এর অলিম্পিকে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব মাথায় নিয়ে ভারতকে এনে দিলেন স্বর্ণপদক। পরপর তিনটি অলিম্পিকে হকিতে ভারতীয় দলকে বিশ্বক্রীড়াঙ্গনের শ্রেষ্ঠ করার সুবাদে ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে ভাইসরয়ের কমিশন লাভ করে জমাদার পদে উত্তীর্ণ হন। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে সামরিক জীবনে কিংস কমিশন লাভ করে লেফটেন্যান্ট হন। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে সেনাবাহিনীর প্রথমে ক্যাপ্টেন ও পরে পদে উত্তীর্ণ হন এবং প্রথম শ্রেণীর তথা “সিরিয়াস হকি” খেলা থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অবসরের পর রাজস্থান হকি দলের কোচ হিসেবে কাজ করেন।
অলিম্পিক সাফল্য
১৯২৮, ১৯৩২ ও ১৯৩৬ বিশ্ব অলিম্পিকের হকি খেলার ইতিহাসে উজ্জ্বল মুখ ধ্যানচাঁদ। তিনি তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনে বিশ্ব অলিম্পিক হকি খেলায় মোট ১০১টি গোল করার পাশাপাশি হয়েছেন একক ভাবে গোল করার সর্বোচ্চ স্কোরার। এছাড়াও আন্তর্জাতিক হকি খেলাতে ধ্যানচাঁদ মোট ৩০০টি গোল করেন, যা একটা রেকর্ড। বলা বাহুল্য ধ্যানচাঁদের এই বিশ্ব রেকর্ড আজ পর্যন্ত কেউ ভাঙতে সফল হয়নি।
পুরস্কার
ক্রীড়াক্ষেত্রে অশেষ সাফল্যের জন্য ধ্যানচাঁদকে পদ্মভূষণ দেওয়া হয় ১৯৫২ সালে। সে বছর প্রকাশিত হয় তাঁর আত্মজীবনী ‘গোল’। দিল্লির জাতীয় স্টেডিয়ামটি ২০০২ সালে ধ্যানচাঁদের নামে নামাঙ্কিত করা হয়। আলীগড়ের মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় তাদের একটি হোস্টেলের নাম রাখে তাঁর নামে। লন্ডনের একটি আস্ট্রোটার্ফের নাম ব্রিটিশ সরকার ধ্যানচাঁদের নামে রাখে। এছাড়াও ক্রীড়া ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ “মেজর ধ্যানচাঁদ খেলরত্ন” পুরস্কার দেওয়া হয়। বলা বাহুল্য এনার জন্মদিনকে জাতীয় ক্রীড়া দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
মৃত্যু
স্বনামধন্য হকির জাদুকর ধ্যান চাঁদ ৩রা ডিসেম্বর ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে ৭৪ বছর বয়সে প্রাণত্যাগ করেন।
মেজর ধ্যানচাঁদ জীবনী PDF
File Details :
File Name : Major Dhyan Chand Biography
Language : Bengali
No. of Pages : 02
Size : 01 MB