আন্তর্জাতিক নার্স দিবস | International Nurses Day
ওই আমাদের চোখের মণি
ওই আমাদের বুকের বল,
ওই আমাদের অমর প্রদীপ
ওই আমাদের আশার স্থল।
বহু অধ্যাবসায় ও সাধনায় মানুষ তথা মানব কুলের জানা-অজানা বিভিন্ন রোগ ব্যাধির আরোগ্য কামনায় ডাক্তারের সহকর্মী হিসাবে এই মহান পেশারুপে নার্সিং আজ চরম শিখরে পৌঁছেছে। মানুষের প্রয়োজনে মানুষকেই পাশে দাঁড়াতে হয়। সেই প্রয়োজন কখনও ব্যক্তিগত বা কখনও সামাজিক ক্ষেত্রে হলেও তা প্রয়োজন সমগ্র মানবজাতির প্রেক্ষিতে। এজন্য নার্সিং আজ একটি মহৎ কর্মরূপে সমগ্র পৃথিবীতে বন্দিত।
যাঁহারা পরম সহিষ্ণুতায় লালন করে সেবাপ্রাপক অসুস্থ্য মানুষকে করে তোলে সুস্থ। তাই বলা যায় নার্সরাই হলেন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাসপাতাল, নার্সিংহোম সর্বোপরি এ ধরাধামের সেবায়ত ভবিষ্যৎ কর্ণধার।
প্রসঙ্গত এই ধরাধামে সাম্প্রতিক যে বিশ্ব যুদ্ধ ঘটে যেখানে শত্রুরূপী নোবেল করোনা ভাইরাসকে কার্যত অদৃশ্য প্রায় করে তুলেছে স্বাস্থ্যকর্মীরা। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই লড়াইয়ের মুখে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা স্বাস্থ্যকর্মীদের এক বৃহৎ অংশই হল নার্স বা সেবিকা। তাই আজ ১২মে ‘আন্তর্জাতিক নার্স দিবস’ -এ দাঁড়িয়ে তাদের প্রতি যথার্থ সম্মান জানাতেই এই প্রতিবেদন।
সমগ্র বিশ্বে নার্সদের প্রতি যথাযোগ্য সম্মান ও অভিবাদন জানাতে বহুমুখী কর্মপ্রতিভার অধিকারী ‘লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প’ খ্যাত ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্মদিন উপলক্ষে ১৯৭৪ সাল থেকে ১২ই মে এই দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক নার্স দিবস’ হিসাবে পালন করা হয়।
ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল
১৮২০ সালের ১২ই মে ইতালির ফ্লোরেন্স অঞ্চলের এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল। শিশুজীবন থেকেই ব্যথিত ব্যথাজনিত জর্জরিত মানুষের জন্য তার কোমল হৃদয় বারে বারেই কেঁদে উঠতো। তাই কৈশোরকাল থেকেই মানবতার প্রতি গভীর মমত্ববোধ, সহানুভূতি ও সমবেদনার বর্ষপূর্তি হয়েই সেবিকাবৃত্তি গ্রহণের মাধ্যমে মানসিক ও শারীরিক ভাবে উৎসর্গীকৃত করেন। ১৮৫৩ সালে প্যারিসের এক মিশনারী হাসপাতালে নার্স হিসাবে যোগদান করেন । ঐ বছরই শুরু হওয়া ক্রিমিয়ার যুদ্ধে আহত, পঙ্গু, যুদ্ধকাতর সৈনিকদের কয়েক বছর প্রতিনিহত দৈনিক ২০ ঘন্টা সেবাপ্রদানের মাধ্যমে সারিয়ে তুলে গেছেন। একারণেই আধুনিক নার্সের জনক হিসাবে ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল Lady with the Lamp / দ্বীপ হাতে রমনী নামেই অতি পরিচিত। নার্সিংকে সেবামূলক পেশারুপে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ১৮৬০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘নাইটিঙ্গেল ট্রেনিং স্কুল’ (বর্তমানে যেটি ‘ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল স্কুল অব নার্সিং’ নামে পরিচিত)।
ভারতবর্ষে গ্রামীণ মানুষের সেবায় এ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা চালান ও উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মানুষের সেবায় দৃষ্টান্তমূলক অবদানের জন্য ১৮৮৩ সালে মহারাণী ভিক্টোরিয়া তাকে ‘রয়েল রেডক্রস’ সম্মানে সম্মানিত করেন। এছাড়াও ১৯০৭ সালে প্রথম মহিলা হিসাবে ‘অর্ডার অব মেরিড’ ও ১৯০৮ সালে লন্ডনে ‘অনারারি ফ্রিডম’ পুরস্কারে ভূষিত হন। এর পরবর্তীতে আকস্মিক ভাবে নিজেই পঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন রোগযন্ত্রনা পেয়ে ১৯১০ সালের ১৩ই আগস্ট পরলোক গমন করেন।