Wednesday, October 9, 2024
Homeরবীন্দ্রনাথ ঠাকুররবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাদর্শন | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষা চিন্তা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাদর্শন | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষা চিন্তা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাদর্শন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাদর্শন সম্পর্কে আলোচনা করো

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাদর্শন
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাদর্শন

সুপ্রিয় বন্ধুরা,
আজকের পোস্টে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষা দর্শন সম্পর্কে আলোচনা করলাম। যেটির মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষা দর্শন বা শিক্ষা চিন্তার বৈশিষ্ট্য খুব সুন্দরভাবে আলোচনা করা আছে। সুতরাং সময় অপচয় না করে পোস্টটি ভালো করে দেখে নাও।

■ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাদর্শনঃ
শিক্ষা সংক্রান্ত আলোচনার মধ্য দিয়ে আমরা বিশ্বের ইতিহাস পর্যালোচনায় যে সমস্ত মহান শিক্ষাবিদদের সম্পর্কে জানতে পারি যারা নিজ নিজ দেশের সীমানা বাড়িয়ে সারা বিশ্বকে নিজের বাসভূমিতে পরিণত করেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শন তাঁর জীবনদর্শন দ্বারা গভীর ভাবে প্রভাবিত। তাঁর জীবনদর্শনের বিভিন্ন দিকগুলি তাঁর শিক্ষাচিন্তার মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয়েছে। তাঁর শিক্ষাচিন্তার বিভিন্ন দিকগুলি নিম্নে তুলে ধরা হল –

(১) শিক্ষার অর্থঃ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাচিন্তার মধ্য দিয়ে বিশ্বজনীনতা, বিশ্বমানবতা ও বিশ্বসৌহার্দের বার্তা ছড়িয়ে পড়ে। তিনি বলেছেন-শিশুদের প্রাকৃতিক পরিবেশে শিক্ষাদান করতে হবে, যাতে তাদের মধ্যে প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা জন্মায়।

(২) শিক্ষার লক্ষ্যঃ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিক্ষার যে সমস্ত লক্ষ্যগুলোর কথা বলেছেন, সেগুলি হল-

(ক) শারীরিক বিকাশঃ
শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও দৈহিক বিকাশ ঘটানো হল শিক্ষার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। এর জন্য শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কাজকর্মে, যেমন- সাঁতার কাটা, খেলাধুলা, গাছে চড়া, ব্যায়াম ইত্যাদিতে অংশগ্রহনের জন্য উৎসাহিত করতে হবে।

(খ) নৈতিক ও আধ্যাত্মিক বিকাশঃ
রবীন্দ্রনাথের মতে শিক্ষার আরেকটি লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীর নৈতিক আধ্যাত্মিক বিকাশ সাধন করা।

(গ) সুপ্ত সম্ভবনা গুলির বিকাশঃ
রবীন্দ্রনাথের মতে প্রত্যেকটি শিশুর মধ্যে কতকগুলি অভ্যন্তরীন ক্ষমতা সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে। তাই শিক্ষার লক্ষ্য হবে সেই সমস্ত সুপ্ত সম্ভবনাগুলির বিকাশসাধন ঘটানো।

(ঘ) মানসিক বিকাশঃ
শিক্ষার্থীদের দৈহিক বিকাশের সাথে সাথে তাদের মানসিক বিকাশ ঘটানোও হল রবীন্দ্রনাথের মতে শিক্ষার একটি প্রধান লক্ষ্য।

(ঙ) সৃজনাত্মক ক্ষমতার বিকাশঃ
শিক্ষার্থীদের সৃজনাত্মক ক্ষমতার বিকাশ ঘটানো রবীন্দ্রনাথের মতে শিক্ষার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য।

(৩) শিক্ষানীতিঃ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রকৃতিবাদী দর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর শিক্ষানীতির প্রধান দিকগুলি হল-

(ক) শিক্ষার মাধ্যমঃ
রবীন্দ্রনাথের মতে শিক্ষার মাধ্যম হবে মাতৃভাষা।

(খ) ব্যক্তিত্বের শিক্ষাঃ
শিশু শিক্ষার্থীরা যাতে আত্মপ্রকাশের সুযোগ পায়, তার জন্য তাদের স্বাধীনভাবে শিক্ষাগ্রহণের অধিকার দিতে হবে, কেননা এর ফলে তাদের ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটবে।

(গ) সামাজিক বিকাশঃ
শিক্ষার্থীদের সামাজিক কাজকর্মে অংশগ্রহণের মধ্যমে সমাজসেবামূলক মনোভাব জাগ্রত করে তোলা যায়। যাঁর ফলে শিক্ষার্থীদের সামাজিক বিকাশ জাগ্রত হবে।

(ঘ) পুঁথিগত জ্ঞান বর্জনঃ
পুস্তককেন্দ্রীক জ্ঞান আরোহনের প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে প্রকৃত জ্ঞান আরোহনের উপর অধিক গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।

(ঙ) প্রাকৃতিক পরিবেশঃ
কোলাহল মুক্ত প্রকৃতির কোলে উন্মুক্ত ভাবে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দিতে হবে।

(৪) শিক্ষণ পদ্ধতিঃ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গতানুগতিক, ত্রুটিপূর্ণ ও যান্ত্রিক শিক্ষন পদ্ধতির ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি এমন শিক্ষন পদ্ধতির কথা বলেছেন যাতে শিক্ষার্থীরা বাস্তব জীবনের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন এবং সমাধান করার মধ্যে দিয়ে প্রত্যক্ষভাবে জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। তিনি যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষন পদ্ধতির কথা বলেছেন সেগুলি হল-

(ক) আলোচনা পদ্ধতি

(খ) কর্মকেন্দ্রিক পদ্ধতি

(গ) চলমান শিক্ষা

(৫) পাঠ্যক্রমঃ
রবীন্দ্রনাথের মতে পাঠ্যক্রম এমন হবে, যাতে তার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দৈহিক, মানসিক, নৈতিক, সামাজিক, আধ্যাত্বিক তথা শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীন দিকের পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন করা। এই জন্য কর্মকেন্দ্রিক এবং বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে পাঠ্যক্রম রচনা করতে হবে। তিনি বলেছেন পুস্তককেন্দ্রিক জ্ঞান দানের প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে বাস্তবভিত্তিতে জ্ঞানদানের প্রতি অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়া সাধারণ বিষয়গুলির শিক্ষাদানের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের সহ পাঠ্যক্রমিক কার্যাবলী পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এককথায় শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় যাবতীয় সমস্ত বিষয়ই শিক্ষাদান পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

(৬) শৃঙ্খলাঃ
শৃঙ্খলা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন-শিক্ষার্থীরা যাতে নিজেদের মতো করে কাজকর্ম করতে পারে এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে, সেজন্য পরিপূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করতে হবে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষক মহাশয় বন্ধুত্বপূর্ণ অচরণ করবে, তাদের ভালোবাসবেন এবং সহানুভূতিশীল হবেন। তিনি মনে করতেন শিক্ষার্থীরা প্রকৃতির সাহায্যে নিজেরাই শিখবে, শিক্ষক মহাশয় কেবল সাহায্যকারীর ভূমিকা গ্রহণ করবে।

সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে যে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাচিন্তা শিক্ষার্থীকে উচ্চ ও সুশিক্ষিত ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে উত্তম সহায়ক।

RELATED ARTICLES

3 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Recent posts

popular posts