শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ও ভূমিকা
সুপ্রিয় বন্ধুরা,
আজকের পোস্টে শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ও ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করলাম। নীচে খুব সুন্দরভাবে পয়েন্ট অনুযায়ী শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ও ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করা আছে। সুতরাং সময় অপচয় না করে পোস্টটি ভালো করে দেখে নিন।
শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ও ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাচিন্তার বাস্তব প্রয়োগ যেমন ঘটেছিল শান্তিনিকেতনে তেমনি তাঁর শিক্ষা চিন্তার আরও একটি অন্যতম দিক হল পল্লী উন্নয়ন মূলক কর্মসূচি। কারণ তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে, ভারতবর্ষের সার্বিক উন্নয়ন ঘটাতে গেলে সর্বাগ্রে গ্রাম বাংলার মানুষের জীবনের মানোন্নয়ন ঘটাতে হবে।এই উদ্দেশ্যে তাঁর এই ভাবনার বহিঃপ্রকাশ ঘটে ১৯২২ খ্রীষ্টাব্দের ৬ই ফেব্রুয়ারি শান্তিনিকেতন থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে ‘সুরুল’ গ্রামে ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠনের মাধ্যমে। গ্রামীণ মানুষের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ও জীবনোপযোগী শিক্ষা প্রদান করাই ছিল শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য। এই জন্য তিনি ১৯২৪ খ্রীস্টাব্দে ‘শ্রীনিকেতন শিক্ষাসত্র’ নামে একটি গ্রামীণ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে কুঠির শিল্প, হস্ত শিল্প, বয়স্ক শিক্ষা পল্লীজীবনের উন্নয়নের উপর যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছিল।
শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার মূলে ছিল পল্লী জীবনের উন্নয়ন ঘটানো। কারণ তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে, দেশের সার্বিক উন্নয়ন ঘটাতে গেলে গ্রামীণ মানুষ্য জীবনের মানোন্নয়ন ঘটানো সর্বাগ্রে প্রয়োজন। তিনি যে সমস্ত উদ্দেশ্য সামনে রেখে শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠা করেন, সেগুলি হল-
(১) পল্লীজীবনের উন্নয়ন সাধন
রবীন্দ্রনাথের শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার একটি অন্যতম উদ্দেশ্যই ছিল পল্লীজীবনের উন্নয়ন ঘটানো। গ্রামীণ মানুষের জীবনের সমস্যা গুলির সমাধানের মধ্য দিয়ে গ্রাম বাংলার মানুষের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন ঘটানোই ছিল শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য।
(২) স্বনির্ভরশীল করে তোলা
হাতে কলমে বাস্তব জীবনোপযোগী শিক্ষা প্রদান করার মধ্য দিয়ে গ্রাম বাংলার শিক্ষার্থীদের স্বনির্ভরশীল করে তোলাও শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য।
(৩) ব্যবহারিক শিক্ষা প্রদান
গ্রাম্য জীবনের উপযোগী ব্যবহারিক শিক্ষা প্রদান করাও ছিল শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার একটি উদ্দেশ্য। এই জনক শ্রীনিকেতনে শিক্ষার্থীদের কৃষি, পশুপালন, তাঁতের কাজ, মৌমাছি প্রতিপালন ইত্যাদি বিষয়ে ব্যবহারিক শিক্ষা প্রদান করা হত।
(৪) গ্রামীণ উন্নয়নমূলক স্বাস্থ্যরক্ষা কর্মসূচি
গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য রক্ষা কর্মসূচির আয়োজন করাও ছিল শ্রীনিকেতনের একটি অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য, যা গ্রামীণ মানুষের কল্যাণের স্বার্থে কাজ করবে।
পল্লী উন্নয়নে শ্রীনিকেতনের ভূমিকা
পল্লী উন্নয়নের ক্ষেত্রে শ্রীনিকেতনের ভূমিকা সম্বন্ধে নিম্নে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হল-
(১) গ্রামীন উন্নয়ন
পল্লী অঞ্চলের মানুষের নানাবিধ সমস্যা সমাধানে মধ্য দিয়ে এবং তাদের নানা চাহিদা পুরনের মধ্য দিয়ে গ্রাম্য জীবনে মানুষের জীবনযাত্রার মানের সার্বিক উন্নয়ন ঘটানো শ্রীনিকেতনের একটি বিশেষ কাজ।
(২) কৃষির উন্নয়ন সাধন
গ্রাম বাংলার মানুষের জীবন জীবিকার অন্যতম উৎস হল কৃষি। তাই নানা ধরনের গবেষণা মূলক কাজের মধ্যে দিয়ে কৃষির উন্নয়ন ঘটানো শ্রীনিকেতন একটি অন্যতম প্রধান কাজ। এছাড়াও নানান ধরনের হস্ত শিল্পের শিক্ষাদানের ব্যবস্থাও করা ।
(৩) শিক্ষা
পল্লী ও গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবনের মানোন্নয়ন ঘটানোর জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন সকলের জন্য উপযুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা করা। এই জন্য পল্লী অঞ্চলের ছেলেমেয়েদের শিক্ষাদানের পাশাপাশি বয়স্ক শিক্ষার ব্যবস্থা করাও শ্রীনিকেতন অন্যতম একটি প্রধান কাজ।
(৪) স্বাস্থ্যরক্ষা কর্মসূচি
গ্রাম বাংলার মানুষের জীবনকে সুন্দর ও স্বাস্থ্য সম্মত করে তোলার জন্য নানা ধরনের স্বাস্থ্য রক্ষা কর্মসূচিও ছিল শ্রীনিকেতনের অন্যতম প্রধান গুরুদায়িত্ব।
(৫) সহযোগিতা প্রদান
গ্রামীণ মানুষের নানা সমস্যা সমাধানে এবং তাদের জীবন যাত্রার মানোন্নয়ন ঘটানোর জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া শ্রীনিকেতনের অন্যতম একটি গুরু দ্বায়িত্ব।
(৬) মেধা অন্বেষণ সংস্থা
গ্রামবাংলার মেধাবী শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করে তাদের উপযুক্ত শিক্ষা পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করার জন্য শ্রীনিকেতন ‘মেধা অন্বেষণ সংস্থা’র ব্যবস্থা করা।
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে যে, পল্লী তথা গ্রাম জীবনের উন্নয়নে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত শ্রীনিকেতনের অবদান উল্লেখযোগ্য।
■ আরো পড়ুনঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাদর্শন সম্পর্কে আলোচনা