স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বক্তব্য | Independence Day Speech in Bengali 2024
যারা স্কুল, কলেজ, কোচিং সেন্টার, ক্লাব বা অফিসে পালিত স্বাধীনতা দিবস অনুষ্ঠানে ভারতের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্য বক্তৃতা বা বক্তব্য বা ভাষণ দেওয়ার জন্য ভারতের স্বাধীনতা দিবস নিয়ে ভালো ধরনের আর্টিকেল অনুসন্ধান করছেন, তাদের জন্য আমাদের আজকের এই পোস্ট।
আপনি হয়তো স্বাধীনতা দিবস অনুষ্ঠানে বক্তব্য বা ভাষণ দেওয়ার কথা ভেবেছেন, কিন্তু প্রথমে কি বলে শুরু করবেন বা কীভাবে পরপর সাজিয়ে-গুছিয়ে বক্তব্যটি সবার কাছে উপস্থাপনা করছেন, সেই সম্পর্কে কিছু ভেবে পাচ্ছেন না।
আমরা আশা রাখছি আমাদের এই পোস্টটি আপনাকে ভারতের স্বাধীনতা দিবস নিয়ে গুছিয়ে ও সুন্দরভাবে বক্তব্য রাখতে ভীষণভাবে সাহায্য করবে এবং আপনার বক্তব্যটিই অনুষ্ঠানের সেরা বক্তব্য হবে।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বক্তব্য
আমার প্রিয় দেশবাসীগণ,
৭৮তম স্বাধীনতা দিবসের এই মহতী অনুষ্ঠানে উপস্থিত আপনাদের সকলকে এবং গোটা বিশ্বে ভারতকে ভালোবাসেন, গণতন্ত্রকে ভালোবাসেন এমন সবাইকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাচ্ছি। আজ স্বাধীনতা মহোৎসবের এই পবিত্র পর্বে আমাদের সমস্ত স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং যারা দেশের সুরক্ষায় দিনরাত এক করে নিজেদের উৎসর্গ করেন সেই সমস্ত বীরাঙ্গনাদের আমরা আজ প্রণাম জানাই।
১৭৫৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী দেওয়ানী লাভের পরবর্তী সুদীর্ঘ প্রায় ২০০ বছরের পরাধীনতার গ্লানিকে স্বাধীনতার গণআন্দোলনে রূপান্তরিত করা পূজনীয় বাপু থেকে শুরু করে স্বাধীনতার জন্য নিজেদের সমস্ত কিছু বিলিয়ে দেওয়া নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, ভগত সিং, চন্দ্রশেখর আজাদ, বিসমিল এবং আশফাকুল্লাহ খানের মতো মহান মুক্তি সেনানী থেকে শুরু করে ঝাঁসির রাণী লক্ষ্মীবাই অথবা মাতঙ্গিনী হাজরার দুঃসাহসী লড়াই, দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত নেহরুজি থেকে শুরু করে দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্রে পরিবর্তিত করা সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, কিংবা ভারত গঠনের দিশা নির্দেশকারী, পথ নির্মাণকারী বাবাসাহেব আম্বেদকর-সহ প্রত্যেক ব্যক্তি ও ব্যক্তিত্বকে আমরা আজ স্মরণ করি যাহাদের কাছে আমরা ঋণী।
ভারত এক বহুরত্না বসুন্ধরা! আজ ভারতের প্রতিটি প্রান্তে, প্রতিটি সময় খণ্ডে অসংখ্য মানুষ, যাঁদের নাম হয়তো বা ইতিহাসের পাতায় খুঁজে পাওয়া যাবে না, সেই তাঁরাই এই দেশ গড়েছেন, একে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। আমরা এরকম প্রত্যেক মানুষকে শ্রদ্ধা জানাই।
ভারত বহু শতাব্দী ধরে মাতৃভূমি, সংস্কৃতি এবং স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছে। পরাধীনতার গ্লানি, স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা এই দেশ শতাব্দী ধরে কখনই পরিত্যাগ করেনি। সে যতই জয় কিংবা পরাজয় আসুক, কিন্তু মনের মন্দিরে লালন করে আসা স্বাধীনতার আর্তিকে কখনও ফুরিয়ে যেতে দেয়নি।
স্বাধীনতা দিবস হল ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের একটি জাতীয় দিবস। ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট ভারত ব্রিটিশ রাজশক্তির শাসনকর্তৃত্ব থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। সেই ঘটনাটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য প্রতি বছর ১৫ই আগস্ট তারিখটি ভারতে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। সতেরোশ শতাব্দীর মধ্যেই ইউরোপীয় বণিকেরা ভারতীয় উপমহাদেশে তাদের বাণিজ্যকুঠি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আঠারোশ শতাব্দীর মধ্যে অপ্রতিরোধ্য সামরিক শক্তির জোরে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের প্রধান শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করে। ১৮৫৭ সালে প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের পরের বছর ভারত শাসন আইন পাস হয় এবং উক্ত আইন বলে ব্রিটিশ রাজশক্তি কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটিয়ে ভারতের শাসনভার স্বহস্তে তুলে নেয়। তৎকালীন সময়ে এরূপ অসন্তোষ থেকে মোহনদাস করমচন্দ গান্ধীর নেতৃত্বে অহিংস অসহযোগ ও আইন অমান্য আন্দোলন ঘনীভূত হয়। যার ফলে স্বাধীনতার আন্দোলন আরোও তীব্র আকার ধারণ করে। ১৯২৯ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের লাহোর অধিবেশনে পূর্ণ স্বরাজ ঘোষণাপত্র বা “ভারতের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র” গৃহীত হয়। ২৬শে জানুয়ারি তারিখটিকে স্বাধীনতা দিবস ঘোষণা করা হয়। কংগ্রেস জনগণকে আইন অমান্যের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার ডাক দেয় এবং যতদিন না ভারত সম্পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করে ততদিন সময়ে সময়ে কংগ্রেসের নির্দেশ পালন করতে বলা হয়। ১৯৩০ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত ২৬শে জানুয়ারি তারিখটি কংগ্রেস স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করে আসছিল। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে ১৯৪৬ সালে যুক্তরাজ্যের সরকারি অর্থভাণ্ডার নিঃশেষিত হয়ে গিয়েছিল। সেই সময় সদ্য-নির্বাচিত লেবার সরকার অনুভব করে, ক্রমাগত অস্থির হয়ে ওঠা ভারতের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার ক্ষেত্রে ব্রিটেনের জনসাধারণের সমর্থন পাওয়া যাবে না এবং এই ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সাহায্যও পাওয়া অসম্ভব হবে। তাছাড়া স্থানীয় সেনাবাহিনীও যে এই কাজে নির্ভরযোগ্য হবে না, তাও সরকার অনুভব করে। এমতাবস্থায় ১৯৪৭ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট এটলি ঘোষণা করেন, ১৯৪৮ সালের ৩০শে জুনের মধ্যেই ব্রিটিশ সরকার ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা অনুমোদন করতে চলেছে।স্বাধীনতা ঘোষণার সময় যত এগিয়ে আসতে থাকে, পাঞ্জাব ও বাংলা প্রদেশের হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তত বৃদ্ধি পায়। দাঙ্গা রোধে ব্রিটিশ বাহিনীর অক্ষমতার কথা মাথায় রেখে ভারতের তদনীন্তন ভাইসরয় লুইস মাউন্টব্যাটেন ক্ষমতা হস্তান্তরের দিনটি সাত মাস এগিয়ে আনেন।ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়া রাজনৈতিক উত্তেজনা হ্রাস পায় ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা অর্জনের ১৯৪৭ সালের জুন মাসে জওহরলাল নেহেরু, আবুল কালাম আজাদ, মহম্মদ আলি জিন্নাহ, ভীমরাও রামজি আম্বেডকর প্রমুখ জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দ ধর্মের ভিত্তিতে ভারত বিভাগের প্রস্তাব মেনে নেন। হিন্দু ও শিখ সংখ্যাগুরু অঞ্চলগুলি ভারতে ও মুসলমান সংখ্যাগুরু অঞ্চলগুলি নবগঠিত রাষ্ট্র পাকিস্তানে যুক্ত হয়; পাঞ্জাব ও বাংলা প্রদেশ দ্বিখণ্ডিত হয়। দেশভাঙ্গনের কষ্ট নিয়ে ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট নতুন পাকিস্তান অধিরাজ্য জন্ম নেয় এবং মধ্যরাতে অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট সূচিত হলে জওহরলাল নেহেরু তার বিখ্যাত নিয়তির সঙ্গেব অভিসার অভিভাষণটি প্রদানের মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
একবিংশ শতাব্দীতে ভারতের স্বপ্নগুলি এবং আকাঙ্ক্ষাগুলিকে বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে কোনও বাধা এখন আমাদের থামাতে পারবে না। আমাদের শক্তিই আমাদের প্রাণচাঞ্চল্য, আমাদের শক্তিই আমাদের ঐক্যবদ্ধতা, আমাদের প্রাণশক্তি ‘রাষ্ট্র সর্বাগ্রে, সর্বদাই সর্বাগ্রে’-র ভাবনা। এই সময় হল মিলিতভাবে স্বপ্ন দেখার। এই সময় হল সবাই মিলে সঙ্কল্প নেওয়ার। এই সময় হল সবাই মিলে চেষ্টা করে যাওয়ার আর এই সময় হল আমাদের বিজয়ের পথে এগিয়ে চলার।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সভ্যগণকে এবং সমগ্র দেশবাসীকে ৭৮তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আরেকবার শ্রদ্ধাপূর্বক শুভেচ্ছা জানাই।
জয় হিন্দ,
বন্দে মাতরম,
ভারতমাতার জয়।
■ আরও পড়ুনঃ ভারতের স্বাধীনতা দিবস রচনা
Thank you sir upnara jevabe student der help korchen. Khub valo lagche amader Bharat jemon mohan temoni lokjono mohan jai bharat🇮🇳🇮🇳🇮🇳
I want this pdf
Thank you sir.
Most Thanks 🙏