জিএসটি কি | জিএসটির ইতিহাস | জিএসটির প্রকারভেদ | জিএসটির উদ্দেশ্য | জিএসটির সুবিধা
সুপ্রিয় বন্ধুরা,
আজকের পোস্টে GST সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করলাম। যেটির মধ্যে GST কি, GST এর ইতিহাস বা টাইমলাইন, GST এর প্রকারভেদ, GST এর উদ্দেশ্য, GST এর সুবিধা প্রভৃতি খুব সুন্দরভাবে দেওয়া আছে।
সুতরাং দেরী না করে পোস্টটি ভালো করে দেখে নিন। আমরা আশা রাখবো পোস্টটি আপনাদের GST সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা গঠনে ভীষণভাবে সাহায্য করবে।
জিএসটি ফুল ফর্ম
Goods and Service Tax (পণ্য ও পরিষেবা কর)।
জিএসটি কি
“পণ্য ও পরিষেবা কর” -এটি সংক্ষেপে জিএসটি নামে পরিচিত, যা ভারতবর্ষে পণ্য ও পরিষেবা সরবরাহের উপর আলোপিত করকে বোঝানো হয়।
বৃহৎ ভাবে বলতে গেলে, পণ্য বিক্রয়ের উপর আরোপিত এক ধরনের পণ্য ও পরিষেবা কর, যা সঠিক পরিমাণের উপর আরোপ করা হয়। জিএসটি সমগ্র জাতির জন্য একটি পরোক্ষ কর। জিএসটি অর্জনের সামগ্রিক উদ্দেশ্যে হল জাতীয় স্তরে পণ্য এবং পরিষেবার উপর প্রয়োগের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটানো। এই ব্যবস্থায়, করের প্রতিটি পর্যায়ে প্রদত্ত মূল্য সংযোজন কর, সাপ্লাই চেইন বা পরিষেবার প্রতিটি পর্যায়ে জিএসটির অর্জিত মূল্যের সংযোজন সঠিক পরিমাণের উপর আরোপ করা হয়। সেজন্য কেউ কেউ জিএসটিকে গন্তব্য ভিত্তিক কর হিসাবেও বর্ণনা করেছেন।
জিএসটির ইতিহাস
জিএসটির ইতিহাস সম্পর্কে জানতে গেলে দেখা যায় যে, ফ্রান্সে ১৯৫৪ সালে প্রথম জিএসটি চালু হয়। তারপরে ধীরে ধীরে সত্তর ও আশির দশকে জার্মানি, ইতালি, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার মতো উন্নত দেশ জিএসটি চালু করে। তবে ভারতে –
- ২০০০ সালে : জিএসটি ধারণার গ্রহণ হয়;
- ২০০৩-০৪ সালে : জিএসটি মডেলের ডিজাইন করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়;
- ২০০৬-০৭ সালে : বাজেটের বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রক ১লা এপ্রিল ২০১০ থেকে জিএসটি প্রর্বতনের ঘোষণা দেয়;
- ২০০৯ সালে : জিএসটির উপর প্রথম আলোচনা পত্র প্রকাশিত হয়;
- ২০১১ সালে : ১১৫তম সংবিধান সংশোধনে সংসদে জিএসটির প্রাসঙ্গিকতার বিধানগুলি অন্তর্ভুক্ত করা হয়;
- ২০১১-১৩ সালে : জিএসটি বিল স্ট্যান্ডিং কমিটিতে উল্লেখ করা হয়েছে;
- সংবিধান (১১৫ তম সংশোধন) বিল ১৫তম লোকসভা ২০১৪-১৫ ভেঙ্গে যাওয়ার সাথে বাতিল হয়ে যায়। তার পরবর্তীতে
- ২০১৪ সালে (ডিসেম্বর) : সংবিধানে ১২২ তম সংশোধনে জিএসটি বিল প্রবর্তিত হয়;
- ২০১৫ সালে (মে) : লোকসভায় জিএসটি বিল পাশ হয়;
- ২০১৬ সালে (আগস্ট) : রাজ্যসভায় বিলটি পাশ হয়;
- ২০১৬ সালে (সেপ্টেম্বর) : রাষ্ট্রপতি মহাশয় বিলটিতে মান্যতা দিলে বিলটি আইনে পাশ হয়;
- ২০১৭ সালে : সংবিধান ১০১ তম সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে জিএসটি বিলটি যুক্ত করা হয়েছে এবং ১লা জুলাই ২০১৭ সালে জিএসটি প্রথম চালু হয়।
***তবে মনে রাখতে হবে জিএসটি চালুর ক্ষেত্রে বিজয় কলকার সমিতি প্রথম পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং এই জিএসটি বিলটি কানাডা দেশের অনুকরণে করা হয়েছে।
জিএসটির প্রকারভেদ
মূলত চার ধরনের জিএসটির প্রকারভেদ রয়েছে, সেগুলি নিম্নরূপ-
1. কেন্দ্রীয় পণ্য ও পরিষেবা কর (CGST)
CGST হল পণ্য ও পরিষেবা করের (GST) একটি অংশ যেটি কেন্দ্রীয় পণ্য ও পরিষেবা আইন ২০১৬-এর অধীনে পড়ে। এই কর কেন্দ্রে প্রদেয়। এই ট্যাক্স দ্বৈত GST ব্যবস্থা অনুযায়ী চার্জ করা হয়।
2. রাজ্যের পণ্য ও পরিষেবা কর (SGST)
রাজ্যের পণ্য ও পরিষেবা কর (SGST) রাজ্যের মধ্যে পণ্য ক্রয়ের উপর চার্জ করা হয়। এটি রাজ্য সরকারের অধীনে পড়ে। এই কর রাজ্য সরকারকে প্রদেয়। SGST বিনোদন কর, রাজ্য বিক্রয় কর, মূল্য সংযোজন কর, প্রবেশ কর, উপকর এবং সারচার্জের মতো কর প্রতিস্থাপন করেছে।
3. সমন্বিত পণ্য ও পরিষেবা কর (IGST)
ইন্টিগ্রেটেড গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স বা সমন্বিত পণ্য ও পরিষেবা কর (IGST) যেটা আন্তঃরাজ্য লেনদেনে প্রয়োগ করা হয়। এই কর এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে পণ্য ও পরিষেবা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কেন্দ্রীয় সরকার এই কর সংগ্রহ করে এবং তা রাজ্যে বিতরণ করে। এই কর রাজ্যগুলিকে প্রতিটি রাজ্যের পরিবর্তে কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে সরাসরি লেনদেনে সহায়তা করে থাকে।
4. কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পণ্য ও পরিষেবা কর (UTGST)
দেশের যেকোনো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পণ্য ও পরিষেবা সরবরাহের ক্ষেত্রে কেন্দ্রশাসিত দ্রব্য ও পরিষেবা কর প্রয়োগ করা হয়। এগুলো আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, দমন ও দিউ, দাদরা ও নগর হাভেলি, লক্ষদ্বীপ এবং চণ্ডীগড়। এই কর সেন্ট্রাল গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স (CGST) এর সাথে প্রযোজ্য।
জিএসটির উদ্দেশ্য
জিএসটি চালুর প্রধান উদ্দেশ্যই হল- “এক দেশ, এক কর” কার্যকর করা। তার পাশাপাশি অন্যান্য করের অবসান ঘটানো, কর প্রদানে স্বচ্ছতা প্রদান করা, দ্রব্যের মূল্য হ্রাস এছাড়া দেশের রাজস্ব বৃদ্ধি করা।
জিএসটি প্রদানের সীমানা/দায়বদ্ধতা
যে ব্যবসায় বার্ষিক টার্নওভার ২০লক্ষ টাকার বেশি তাদের অবশ্যই জিএসটি দিতে হবে কিন্তু ভারতের উত্তর-পূর্ব এবং বিশেষ ক্যাটাগরির রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে টার্নওভারের মাত্রা ১০ লক্ষ টাকার বেশী তারাও জিএসটি দিতে দায়বদ্ধ থাকবে। এছাড়া আন্তঃরাজ্য বাণিজ্যের সাথে জড়িত ব্যবসাগুলি এই জিএসটি দিতে বাধ্য থাকবে।
GST চালুর সুবিধা
“One Nation, One Tax” (এক দেশ, এক কর) বাস্তবায়িত করার মাধ্যমে এদেশে অপ্রত্যক্ষ করের বিলোপ সাধন ঘটানোই ছিল GST চালুর প্রধান উদ্দেশ্য। জিএসটি চালুর বেশ কতকগুলি সুবিধা ছিল, তা নিম্নে বর্ণনা করা হল-
I. করপ্রদানের সরলীকরণ
ব্যবসার ক্ষেত্রে কর, সারচার্জ, সেজস শুল্ক মাসুল দিতে হতো এক্ষেতে তার সরলীকরণ ঘটিতে একটি মাত্র করপ্রদানের দ্বারা করা সম্ভব হয়েছে।
II. ক্যাস্কেডিং এফেক্ট এর বিলোপ ঘটানো
ক্যাস্কেডিং এফেক্ট অর্থাৎ করের ওপর কর দেওয়ার যে পরিষেবা তার অবলুপ্তি ঘটানো গেছে।
III. কর সংগ্রহে স্বচ্ছতা
GST চালু করার মাধ্যমে স্বচ্ছতার সঙ্গে কর সংগ্রহ করা সহজতর হয়েছে।
IV. কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা হ্রাস
GST চালু হওয়ার কারণে করের পরিমাণ কমে যাওয়ার ফলে নাগরিকদের মধ্যে কর ফাঁকি প্রবণতা হ্রাস পেয়েছে।
V. রাজস্বের পরিমান বৃদ্ধি
GST চালু হওয়ার সুবাদে নাগরিকদের সঠিক কর প্রদানের মাধ্যমে সরকারের রাজস্বের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।