ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনা সম্পর্কে আলোচনা করো | ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনা ও তার গুরুত্ব
সুপ্রিয় বন্ধুরা,
যারা ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনা নিয়ে একটা ভালো নোটস এর সন্ধান করছেন, তাদের জন্য আমাদের আজকের এই পোস্ট। এটির মধ্যে খুব সুন্দরভাবে ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনা সম্পর্কে আলোচনা করা আছে, সুতরাং সময় অপচয় না করে পোস্টটি ভালো করে দেখে নিন।
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই আগস্ট ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভ করে। ভারতবর্ষকে স্বাধীন, সুগঠিত এবং সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনার লক্ষে ভারতবর্ষে সংবিধান রচনা করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে, এ উদ্দেশ্যে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের গণপরিষদ গঠনের প্রায় তিন বছর আলাপ-আলোচনার পর ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে নভেম্বর গণপরিষদে খসড়া সংবিধান গৃহীত হয় এবং ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে জানুয়ারি থেকে নতুন সংবিধান কার্যকর হয়। মূল সংবিধানে ১টি প্রস্তাবনা, ৩৯টি ধারা এবং ৮টি তফশিল ছিল। ৯৮বার সংবিধান সংশোধনের ফলে বর্তমানে প্রায় ৪৪৮টি ধারা, অনেক উপধারা এবং ১২টি তফশিল আছে।
ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনা সংবিধানের মুখবন্ধ বা ভূমিকা। ভারতীয় সংবিধানে প্রস্তাবনার জনক হলেন পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু। ১৯৪৬ সালের ২৬শে নভেম্বর গণ পরিষদে তিনি ভারতীয় সংবিধানের লক্ষ্যে সংবলিত যে প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন, তারই পরিবর্তিত রূপ হল ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনা।
ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনা
প্রস্তাবনাটি হল- “আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে এবং তার সমস্ত নাগরিকই যাতে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা, মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা; এবং সকলের মধ্যে ব্যক্তির মর্যাদা এবং জাতীয় ঐক্য ও সংহতি সুনিশ্চিতকরণের মাধ্যমে তাদের মধ্যে যাতে ভ্রাতৃত্বের ভাব গড়ে ওঠে তার জন্য সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথ গ্রহণ করে, আমাদের গণপরিষদে আজ, ১৯৪৯ সালের ২৬শে নভেম্বর, এতদ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ, বিধিবদ্ধ এবং নিজেদের অর্পণ করছি।”
প্রস্তাবনার ব্যাখ্যা
(১) সার্বভৌম
সার্বভৌম বলতে বোঝায়, ভারতবর্ষের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে বিদেশি নিয়ন্ত্রণ মুক্ত ও চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী।
(২) সমাজতান্ত্রিক
সমাজতান্ত্রিক বলতে বোঝায় সমাজে উৎপাদন ও উপকরণগুলির উপর রাষ্ট্রের মালিকানা প্রতিষ্ঠা এবং উৎপাদিত সম্পদের সমান বন্টন। প্রস্তাবনায় ভারতকে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলা হলেও প্রকৃত অর্থে ভারতে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
(৩) ধর্মনিরপেক্ষ
ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে সর্বধর্ম সমান এই নীতির ফলস্বরূপ ভারতবর্ষে কোনো বিশেষ ধর্মের পৃষ্ঠ পোষকতা বা বিরোধিতা করা যাবে। সকল ধর্মের সমান মান্যতা রয়েছে।
(৪) গণতান্ত্রিক
গণতান্ত্রিক বলতে বোঝায় জনগণই সর্বাধিনায়ক অর্থাৎ ভারতীয় শাসনব্যবস্থায় জনগণের সম্মতির ওপর প্রতিষ্ঠিত।
(৫) প্রজাতন্ত্র
প্রজাতন্ত্র বা সাধারণতন্ত্র বলতে বোঝায় ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান উত্তরাধিকারসূত্রে ক্ষমতা লাভ করেন না, তিনি জনগণের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন।
(৬) জাতীয় ঐক্য ও সংহতি
ভারতবর্ষের ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের ভিন্ন ভিন্ন জাতির মানুষ জনের কথা বলার ভাষা, পরনের পোশাক, চিন্তাভাবনা, লোকসংস্কৃতি ধর্মীয় চেতনা সব আলাদা আলাদা। তাই জাতি, ভাষা, ধর্ম কখনই ঐক্যের পরিপন্থী হতে পারে না। আঞ্চলিক বৈচিত্র্যকে অস্বীকারও করা যায় না তাই এই বৈচিত্র্যকে স্বীকার করেই সমগ্র দেশের জাতীয় ঐক্য ও সংহতি রক্ষা করবে।
(৭) ভ্রাতৃত্ববোধ
ভ্রাতৃত্ববোধ বলতে বোঝায় ভারতবর্ষের সকল মানুষ একে অপরের জন্য হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থাকবে ও একে অপরের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়বে। ভাই ভাইয়ের মতো হাতে হাত ধরে থাকবে।