Tuesday, April 30, 2024
Homeসমাজতত্ত্বসামাজিকীকরণ কাকে বলে ? সামাজিকীকরণের মাধ্যমগুলি উল্লেখ করো।

সামাজিকীকরণ কাকে বলে ? সামাজিকীকরণের মাধ্যমগুলি উল্লেখ করো।

সামাজিকীকরণ এবং সামাজিকীকরণের মাধ্যম

সামাজিকীকরণ কাকে বলে ? সামাজিকীকরণের মাধ্যমগুলি উল্লেখ করো।

সামাজিকীকরণ কাকে বলে ? সামাজিকীকরণের মাধ্যমগুলি উল্লেখ করো।
সামাজিকীকরণ কাকে বলে ? সামাজিকীকরণের মাধ্যমগুলি উল্লেখ করো।

সুপ্রিয় বন্ধুরা,
আজকের পোস্টে সামাজিকীকরণ কি এবং সামাজিকীকরণের বিভিন্ন মাধ্যমগুলি আলোচনা করলাম। খুব সুন্দরভাবে এবং ভালো কোয়ালিটি সম্পন্ন ভাষায় সামাজিকীকরণ ও সামাজিকীকরণের মাধ্যমগুলি আলোচনা করা আছে। দেরি না করে নোটসটি দেখে নাও –

সামাজিকীকরণঃ

মানুষ হল সামাজিক জীব। সংস্কৃতির মাধ্যমে ব্যক্তির মানবিক বৈশিষ্ট্য সমূহের উন্মেষ ও বিকাশ ঘটে। ব্যক্তিত্ব বিকাশের এই বিষয়টি একটি স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া। প্রত্যেক সমাজেই সদ্যজাত শিশুকে ধীরে ধীরে বেশ কিছু প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তার ব্যক্তিত্ব বিকাশের চেষ্টা করা হয় এবং তাকে সমাজের উপযোগী বা সামাজিক করে তোলা হয়; এই সামাজিক প্রশিক্ষণই হল সামাজিকীকরণ।

মানুষের অধিকাংশ আচার-ব্যবহারই অর্জিত, সহজাত নয়। শিশু যখন পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে তখন সে শুধুমাত্র কয়েকটি জৈবিক চাহিদা সম্পন্ন প্রাণী হিসাবেই থাকে। সে প্রধানত ক্ষুধা, তৃষ্ণা, কষ্ট প্রভৃতি ইন্দ্রিয়ানুভূতির দ্বারাই তাড়িত হয়। জন্মাবার পর থেকে তাকে প্রচলিত রীতিনীতি ও মূল্যবোধ শেখানো হয়। সে ভাষা শেখে এবং এই ভাষার মাধ্যমেই সে নিজের সামাজিক ঐতিহ্য আস্বত্ব করে। যে পদ্ধতিতে একজন শিশুর সামাজিক বৈশিষ্ট্যগুলি উন্মোচিত ও বিকোশিত হয় এবং তার ব্যক্তিত্ব সুগঠিত হয়, সেই প্রক্রিয়াকে বলা হয় সামাজিকীকরণ।

কিংসলে ডেভিস এর মতে, মানব শিশুর ক্রমশ সামাজিক জীবে পরিণত হওয়ার পদ্ধতি হল সামাজিকীকরণ।

পিটার ওসলে এর মতে, সামাজিকীকরণ হল এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সংস্কৃতি প্রবাহিত হয়। তাছাড়া এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ব্যক্তি গোষ্ঠীর রীতিনীতি ও আচার-ব্যবহার শেখে।

সামাজিকীকরণের মাধ্যমঃ

বিভিন্ন রকমভাবে মানুষের সামাজিকীকরণ ঘটে থাকে, সেগুলি নীচে আলোচনা করা হল –

পরিবারঃ

শিশুর জন্ম পরিবারের মধ্যেই হয় এবং এর মধ্যেই সে লালিত ও পালিত হয়। পরিবারের মধ্যে সে ভাষা, কথা, প্রেমপ্রীতি, ভালোবাসা প্রভৃতি আয়ত্ত করে। ধীরে ধীরে তার মধ্যে সামাজিক চেতনার প্রকাশ ঘটে। পরিবারের বাবা-মার তত্যাবধানে শিশু তার গোষ্ঠীর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উপাদান অর্জন করে থাকে। সুস্থ পরিবারের মধ্যেই শিশু তার সুঅভ্যাস আয়ত্ত করে। নিয়মশৃঙ্খলা, আনুগত্য, শালিনতাবোধ প্রভৃতি সম্পর্কে মানুষ প্রাথমিক জ্ঞান আহরণ করে।

চার্লস হর্টন কুলির মতে, প্রাথমিক গোষ্ঠী বিশেষত পরিবারের সাথে পারস্পরিক ক্রিয়ার মাধ্যমে শিশুর ধারণা জন্মায়।

শিক্ষাঃ

সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিদ্যালয়ে ব্যক্তি ব্যবহারিক ও বিধিবদ্ধ জ্ঞান লাভের পাশাপাশি নিয়মানুবর্তিতা, আদর্শবোধ আয়ত্ত করে এবং পরবর্তী জীবনে নিজেকে সামাজিক হিসাবে পরিণত করে। পরিবারের পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি দ্বিতীয় কর্তৃত্বমূলক সংগঠন যা সামাজিকীকরণে দ্বিতীয় কর্তৃত্বমূলক মাধ্যম বলে বিবেচিত হয়।

বন্ধু-বান্ধবঃ

শিশু যখন একটু বড় হয় তখন সে কোনো না কোনো খেলার সঙ্গী বা সমবয়স্ক বন্ধুগোষ্ঠীতে প্রবেশ করে। এদের সঙ্গে শিশুর মনের মিল তৈরি হয়। এই গোষ্ঠীর কাছ থেকে শিশু সহযোগিতা, ভালোবাসা প্রভৃতি অর্জন করার পাশাপাশি অনেক বিষয় জ্ঞান লাভ করে। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে এই জাতীয় বন্ধু-সংস্কৃতি পরিবারের পিতামাতার সংস্কৃতি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।

গণমাধ্যমঃ

শিক্ষিত সমাজে ব্যক্তি সামাজিকীকরণের অন্যতম বিষয় হল গণমাধ্যম ও সাহিত্য। বিভিন্ন গণমাধ্যম ব্যক্তির চিন্তা ভাবনাকে প্রভাবিত এবং সুগঠিত করে তোলে। ব্যক্তির অভিজ্ঞতা, জ্ঞান, মূল্যবোধ, ভাবাদর্শ প্রভৃতি এই গণমাধ্যমের মধ্য দিয়েই তৈরি হয়। বর্তমান যুগে সাহিত্যের পাশাপাশি সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন প্রভৃতিও সামাজিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এগুলির মধ্য দিয়ে ব্যক্তি যে শুধুমাত্র পারিপার্শ্বিক বিষয় সম্পর্কে অবগত হয় তা নয় এগুলির দ্বারা ব্যক্তির কাছে বিভিন্ন প্রকার বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানঃ

জন্মলাভের পর থেকে মানুষের সমগ্র জীবনধারা জুড়ে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের প্রভাব প্রতিক্রিয়া প্রবলভাবে দেখা যায়। ধর্মের অন্তর্গত বিভিন্ন আদর্শ, বিশ্বাস, ধ্যান-ধারণা, উপদেশ, অনুশাসন প্রভৃতি ব্যক্তির ব্যক্তিত্বকে বিকোশিত করে। ধর্মের অন্তর্গত পাপ-পুন্যের বিষয়টি ব্যক্তিকে অসামাজিক কাজকর্ম থেকে বিরত রাখে।

রাষ্ট্রঃ

আধুনিককালে রাষ্ট্র তার সরকারের আইনবিভাগ, শাসনবিভাগ ও বিচারবিভাগের দ্বারা একদিকে যেমন সমাজের ব্যক্তিদের আচার-আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে, তেমনি অপরদিকে সমাজের স্থিতাবস্থা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে ব্যক্তিকে সামাজিক করে তোলার চেষ্টা করে।

■ Also Check : নারী ও স্ত্রী শিক্ষার বিস্তারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Recent posts

popular posts